অটিজম (Autism)
অটিজম কাকে বলে?
অটিজম (Autism) হলো একটি স্নায়ুবিক এবং বিকাশজনিত বৈচিত্র্য, যা একজন ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, এবং চিন্তাভাবনার ধরনকে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত শৈশবকালেই প্রকাশ পায় এবং আজীবন স্থায়ী হতে পারে।
অটিজমের কিছু বৈশিষ্ট্য:
- সামাজিক যোগাযোগে চ্যালেঞ্জ – চোখে চোখ রেখে কথা বলা, শরীরী ভাষা বোঝা বা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করা কঠিন হতে পারে।
- পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ – একই কাজ বারবার করা, নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা, বা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের প্রতি গভীর আগ্রহ থাকা।
- সংবেদনশীলতা – আলো, শব্দ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি বেশি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে।
- ভাষা ও যোগাযোগের পার্থক্য – কিছু ব্যক্তি স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না, আবার কেউ কেউ খুবই উন্নত ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন হতে পারে।
অটিজমের কারণ:
অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে এটি জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণের ফলে হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
অটিজম কি নিরাময়যোগ্য?
অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি একটি স্নায়ুবিক পার্থক্য। তবে থেরাপি, বিশেষ শিক্ষার পদ্ধতি, এবং পরিবার ও সমাজের সহায়তায় একজন অটিস্টিক ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অনেক উন্নতি করতে পারে। অটিজমের জন্য জিএফ সিএফ ডায়েট সম্পর্কে শুনে থাকতে পারেন এই ডায়েটের প্রচলন বিগত কয়েক বছর ধরে চলছে এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই ভিন্ন মতামত রয়েছে কেউ কেউ এটিকে একটি ফ্যাট ডায়েট বলে আখ্যা দিয়েছেন আবার কেউ কেউ এর কার্যকারীদের উল্লেখ করেছেন যদিও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় তুলনামূলকভাবে সীমিত সেখানে অটিজম শিশুদের ক্ষেত্রে এর উপকারিতা দেখানো হয়েছে অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মা রিপোর্ট করেন যে এটি আচরণ ঘুম এবং কথাবার্তা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
গ্লুটেন মুক্ত ও ক্লোজিন মুক্ত খাবার gfcf টাইটেল নামে পরিচিত এটি অটিজমের আক্রান্ত শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি বিকল্প চিকিৎসার মধ্যে একটি এই কঠোর আয়ত অনুসরণ করার সময় অটিজম শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্যগ্রহণ থেকে প্রোটিন প্রোটিন অর্থাৎ গমেরা টা ময়দার তৈরি খাবার নিতে পাওয়া যায় এবং কেজিন প্রোটিন দুধ ও দ্রুতযানকারী সমস্ত খাবার বাদ দেওয়া হয়। এই ডায়েটের পিছনে চিন্তা হলো যে এটি দুটি প্রোটিন রুটিন ও কেজিং যুক্ত খাবার বাদ দেওয়া যা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষভাবে সমবেদনশীল হতে পারে এই প্রোটিন গুলো হজম করা কঠিন এবং টিনের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে অন্তরের ক্ষতি করতে পারে যখন অন্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন প্রোটিনের ছোট অংশ রক্ত প্রবাহে প্রকাশ করে এবং মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে যা অটিজম শিশুদের সাথে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই।
** দেখে নেয়া যাক গ্লুটেন মুক্ত এবং কেজির মুক্ত ডায়েটে আপনার শিশু কি খাবার উপভোগ করতে পারে-
>> চাল, লাল, চাল, মুড়ি, চিড়া, সাগু, চালের আটা সব ধরনের ডাল ছোলা বাদাম কাঠবাদাম দুধ নারিকেল দুধ কাজু দুধ চালের দুধ অটোস দুধ সব ধরনের সাঁক ও সবজি সব ধরনের মৌসুমী ফল মাছ মুরগি সামুদ্রিক মাছ কবুতর ডিম পানি লেবুর পানি ডাবের পানি অল্প পরিমাণ মাংস মাছ মুরগি সামুদ্রিক মাছ কবুতর ডিম পানি লেবুর পানি ডাবের পানি অল্প পরিমাণে গরুর মাংস কলিজা মগজ খাসি কি লবণ
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (ASD) আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সংবেদনশীল ও সহমর্মী আচরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুই আছে যা অটিস্টিক ব্যক্তিদের জন্য কঠিন বা অস্বস্তিকর হতে পারে। নিচে কিছু বিষয় দেওয়া হলো, যা অটিজমসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচিত নয়:
🚫 যা করা উচিত নয়:
1️⃣ বলপ্রয়োগ বা বাধ্য করা – অটিস্টিক ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট সামাজিক আচরণ, চোখে চোখ রেখে কথা বলা, বা প্রচলিত নিয়মে চলতে বাধ্য করা উচিত নয়। তারা ভিন্নভাবে যোগাযোগ করতে পারে, যা সম্মান করা জরুরি।
2️⃣ অপ্রয়োজনীয় পরিবর্তন চাপানো – হঠাৎ করে রুটিন বা পরিবেশ পরিবর্তন করলে তারা অস্বস্তি বা উদ্বেগে ভুগতে পারে। পরিবর্তন আনতে হলে ধাপে ধাপে এবং তাদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য সময় দিতে হবে।
3️⃣ তাদের অনুভূতিকে ছোট করে দেখা – অনেকে সংবেদনশীল আলো, শব্দ, বা স্পর্শের প্রতি অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এটি উপেক্ষা করা বা "অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া" বলাটা উচিত নয়।
4️⃣ সাধারণ শিশুদের সাথে তুলনা করা – অটিস্টিক শিশুদের সাধারণ শিশুদের সাথে তুলনা করা উচিত নয়। তাদের বিকাশের নিজস্ব গতি রয়েছে, যা সম্মান করা দরকার।
5️⃣ তাদের মতামত বা আগ্রহকে অবহেলা করা – অনেক অটিস্টিক ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে গভীর আগ্রহ রাখে। এটি "অস্বাভাবিক" বলে অবহেলা না করে, বরং তাদের এই আগ্রহকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো উচিত।
6️⃣ তাদের 'সুধরানোর' চেষ্টা করা – অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি স্নায়ুবিক পার্থক্য। তাই তাদেরকে জোর করে "সাধারণ" বানানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।
7️⃣ তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা রাখা – অনেকেই মনে করেন যে, অটিস্টিক ব্যক্তিরা অনুভূতিশূন্য বা বন্ধুত্ব করতে চায় না। কিন্তু বাস্তবে, তারা অনুভূতিপ্রবণ এবং বন্ধুত্ব করতে চায়, যদিও তাদের প্রকাশের ধরন আলাদা হতে পারে।
✅ কী করা উচিত?
👉 তাদের মতামত ও অনুভূতিকে সম্মান করা
👉 সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতা দেখানো
👉 ধৈর্য ধরে তাদের সাথে যোগাযোগ করা
👉 তাদের আগ্রহ ও শক্তিকে কাজে লাগানো
অটিজমসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো "নিষিদ্ধ" খাবার নেই, তবে কিছু খাবার তাদের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে বা সংবেদনশীলতা ও আচরণগত চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে, তাই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
🚫 যে খাবারগুলি এড়িয়ে চলা ভালো:
1️⃣ 🧂 প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড
- চিপস, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোল্ড ড্রিংকস
- এগুলোতে উচ্চমাত্রার চিনি, লবণ ও সংরক্ষণকারী থাকে, যা আচরণগত সমস্যা ও হাইপারঅ্যাক্টিভিটি বাড়াতে পারে।
2️⃣ 🍭 অতিরিক্ত চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি
- ক্যান্ডি, সফট ড্রিংক, মিষ্টি সিরিয়াল, প্যাকেটজাত জুস
- এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে ও কমিয়ে দিতে পারে, যা মুড সুইং, উত্তেজনা বা অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
3️⃣ 🧀 দুগ্ধজাত খাবার (কিছু ক্ষেত্রে)
- গরুর দুধ, পনির, মাখন, আইসক্রিম
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু অটিস্টিক ব্যক্তির শরীর কেসিন (দুধের প্রোটিন) ভালোভাবে হজম করতে পারে না, যা পেটের সমস্যা বা আচরণগত পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
4️⃣ 🌾 গ্লুটেনসমৃদ্ধ খাবার (কিছু ক্ষেত্রে)
- গম, বার্লি, রুটি, পাস্তা, বিস্কুট
- কিছু অটিস্টিক ব্যক্তির জন্য গ্লুটেন (গমের প্রোটিন) হজম করা কঠিন হতে পারে, যা অন্ত্রের সমস্যা বা মনোযোগের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
5️⃣ 🧃 কৃত্রিম রং ও সংরক্ষণকারীযুক্ত খাবার
- ক্যান্ডি, সোডা, জেলি, প্রসেসড সস
- কিছু গবেষণা বলছে, কৃত্রিম রঙ ও সংরক্ষণকারী উপাদান শিশুদের হাইপারঅ্যাক্টিভ ও অস্থির করতে পারে।
6️⃣ 🍟 ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার
- ভাজাপোড়া খাবার, মার্জারিন, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস
- এগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও মনোযোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
✅ যে খাবারগুলি উপকারী হতে পারে:
✔ ফলমূল ও শাকসবজি – ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
✔ ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার – মাছ, চিয়া সিড, আখরোট (মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়)
✔ প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার – বাদাম, বীজ, ডাল, ব্রাউন রাইস (শক্তি ও মনোযোগ বাড়ায়)
অটিস্টিক ব্যক্তির জন্য খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হয়, কারণ প্রতিটি ব্যক্তির সংবেদনশীলতা আলাদা।
- আয়েশা মোস্তফা ( বুশরা )
- বিএসসি (অনার্স), এমএসসি, (খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান)
- পিজিটি-ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন এন্ড ডায়টেটিক্স(বারডেম)
- চেম্বার: ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
- ১/১-বি কল্যাণপুর, ঢাকা- ১২১৬
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন